কাঁকরোল পরিচিত
বাংলাদেশে কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। এদের স্ত্রী পুরুষ ফুল আলাদা গাছে জন্মে। কাঁকরোল গাছ কন্দমূল উৎপন্ন করে যায় সাহায্যে মূলত বংশবিস্তার করে। কাঁকরোল বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। কাঁচাফল তরকারী, ভাজি বা সিদ্ধ করে ভর্তা হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁকরোল প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ ক্যারোটিন আছে।কাকরোলের বীজ কাকরোল গাছের নিচে হয়ে থাকে যা দেখতে মিষ্টি আলুর মত। বাংলাদেশে কুমড়া পরিবারের যতো সবজি আছে তার মধ্যে কাঁকরোলের বাজার দর ও চাহিদা বাজারে অনেক বেশি৷ কাকরোল গাছ লতানো গাছ । স্ত্রী-ফুল ও পুং-ফুল একই গাছে হয় না । তাই বাগানে দুই ধরনের গাছ না থাকলে, পরাগ মিলন না হলে, ফল হবে না।
কাকরোলের ইংরেজি নামঃ
১০০ গ্রাম কাকরোলে আছেঃ
PICTURE:-RAYHAN
LOCATION:-DAMSHUR,VALUKA,MYMONSHINGH
কাকরোলের বৈজ্ঞানিক নামঃ
Momordica
dioica
কাকরোলের ইংরেজি নামঃ
Spiny gourd.
কাকরোলের জাতঃ
কাকরোলের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। যেমন- আসামী, মণিপুরী, মুকন্দপুরী
মধুপুরী ইত্যাদি। আসামী জাতের ফলগুলো সুস্বাদু, গোলাকার ও বেঁটে হয়ে থাকে। মনিপুরী
জাতের ফল লম্বাটে ও অপেক্ষাকৃত চিকন, তবে ফলন বেশী দিয়ে থাকে।
কাকরোলের খাদ্য উপাদানঃ
কাকরোলে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন-বি,
শ্বেতসার ও খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে৷
১০০ গ্রাম কাকরোলে আছেঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে ( ভোজন যোগ্য ) থাকে প্রোটিন ৩.১ গ্রাম,
চর্বি ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.১ গ্রাম, শর্করা ৭.৭ গ্রাম, শক্তি ৫২ কিলো ক্যালরি, ক্যালসিয়াম
৩৩ মিগ্রা, ফসফরাস ৪২ মিগ্রা, আয়রন ৪.৬ মিগ্রা এবং ক্যারোটিন ১৬২০ মাইক্রো গ্রাম।
কাকরোলের ঔষধি গুনগুনঃ
1. কোলেস্ট্ররল
নিয়ন্ত্রণেও কাঁকরোল বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। যাদের শরীরে কোলেস্ট্ররেলের
মাত্রা বেশি থাকে তারা নিশ্চিন্তে কাঁকরোল খেতে পারেন।
2.গর্ভকালীন সময়ে অনেকের স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা দেয়। কাঁকরোল
ভিটামিন বি ও সি-এর ভালো উৎস। যা কোষের গঠন ও নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে
স্নায়ুবিক ত্রুটি হয় না।
3.কাঁকরোলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট, পলিপেপটিড-পি
ও উদ্ভিজ্জ ইনসুলিন আছে। যা ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে যকৃৎ, পেশী ও শরীরের মেদবহুল
অংশে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণ করে।
4.কাঁকরোল ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সাহায্য করে।
5.কাঁকরোল ভিটামিন সি পরিপূর্ণ হওয়ায় প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টরূপে
কাজ করে। যা শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
6.কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লিউটেইন, যা
ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বককে করে তারুণ্যদীপ্ত।
7.কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
8.জ্বর হলে কাঁকরোল পাতার রস কিছু সময় সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে
পান করুন, জ্বর কমে যাবে।
9.পাইলসের সমস্যা থাকলে পাঁচ গ্রাম কাঁকরোল বাটার সঙ্গে পাঁচ
গ্রাম চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন, পাইলস নিরাময় হবে।
10.ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতেও কাঁকরোলের জুড়ি নেই। গোসলের সময়
কাকরোল বাটা স্ক্রাব হিসেবে গায়ে মাখুন, ১০ মিনিট শরীরে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
এতে দুর্গন্ধও কমে যাবে এবং ত্বকও কোমল থাকে।
11.কাশি হলে তিন গ্রাম কাঁকরোল বাটা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে
দিনে তিনবার পান করুন, কাশি কমে যাবে।
12.শ্বাসকষ্ট হলে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম কাঁকরোলের শেকড় বাটার
সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খান, আরাম পাবেন।
13.কিডনিতে পাথর হলে ১০ গ্রাম কাঁকরোল বাটা এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে
খান। এভাবে প্রতিদিন পান করুন, দ্রুত সেরে যাবে।
কাকরোল চাষের সময়ঃ
কাঁকরোলের বীজ বপন বা মোথা রোপণের উত্তম
সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন মাস।
ফসল প্রাপ্তির সময়ঃ
জুলাই
হতে মধ্য সেপ্টেম্বর মাস কাঁকরোল সংগ্রহের উত্তম সময়।