পেঁপে পরিচিতি
পেঁপে একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। যা মানুষ কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সব্জি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকে। এর অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। এর ইউনানী নাম পাপিতা, আরানড খরবূযা। এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী। এটি ছোট অশাখ বৃক্ষে ধরে। কাঁচা ফল বাইরের দিক গাঢ় কালচে সবুজ এবং পাকলে খোসা সহ কমলা রং ধারন করে। পেঁপে একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। এটি যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, ঠিক একইভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। সালাদ হিসেবে চমৎকার। হালুয়া অত্যন্ত সুস্বাদু। আর দামটাও অনেকটাই নাগালের মধ্যে।
পেঁপের বুইজ্ঞানিক নাম
Carica papaya
পেপের ইংরেজি নাম
Papaya
পেপের জাত
পেঁপে, এরা Caricaceae পরিবারের সদস্য।পেপে এর খাদ্য উপাদানঃ-
পেঁপেতে
রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, পেপেইন, পটাসিয়াম, আয়রণ ও আরও
গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনসমূহ।
১০০ গ্রাম পেপেতে আছেঃ-
উপাদান
|
পরিমাণ
|
আমিষ
|
০.৬ গ্রাম
|
স্নেহ
|
০.১ গ্রাম
|
খনিজ পদার্থ
|
০.৫ গ্রাম
|
ফাইবার
|
০.৮ গ্রাম
|
শর্করা
|
৭.২ গ্রাম
|
পেঁপের ঔষধি গুনাগুনঃ-
১. ত্বকের জন্য পেঁপে অনেক উপকারী। ত্বকের
ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে, একজিমা রোধ করতে, এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পেঁপে খুবই উপকারী।
২. প্রাকৃতিকভাবে আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে
সাহায্য করে।
৩. পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই আছে। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
৪. পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে
যা খাবার হজমে সহায়তা করে।
৫. চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল।
৬. পেঁপে
আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। আমাদের দেহে জমা থাকা সোডিয়াম দূর করতে
সহায়তা করে যা হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য দায়ী। উচ্চরক্তচাপ আক্রান্তরা কাঁচা বা পাঁকা
পেঁপে খেতে পারেন। দুটোই উপকারী।
৭. শ্বাস-প্রশ্বাসের আরোগ্য ক্ষেত্রে পেঁপের ভূমিকা অনেক।
নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়।
৮. দাঁতের যন্ত্রণার অব্যর্থ ওষুধ হল পেঁপে।
৯. অন্ত্রের কৃমি রোধ করে পেঁপে।
১০. পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত
১১.
আমাদের অনেকেরই দাদের সমস্যা হয়ে থাকে। তাদের জন্য এ ফল একটি ভালো ওষুধ। এর রস
দাদ ভালো করে।
১২. উকুন দূরীকরণে এ ফল অনেক উপকার। পেঁপের
আঠা মাথায় নিয়মিত লাগালে উকুন দূর হয়। তাছাড়া নিয়মিত খেলে চুলকে সুস্থ ও ভালো
রাখতে সাহায্য করে।
১৩. অনেকের খেতে অরুচি থাকে। খাবার দেখলেই
বমি পায় বা পেট খারাপ হয়, তাদের জন্য পেঁপে খুবই উপকারী।
১৪. মাঝেমধ্যে অনেকেরই পেট ফাঁপা দেখা
দেয়। পেট ফাঁপা দূর করতে পেঁপের সঙ্গে লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে পেট ফাঁপা দূর হয়।
পেঁপে চাষের সময়
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পেঁপের বীজ বোনার
উপযুক্ত সময়। আর চারা রোপণের সময় মার্চ থেকে এপ্রিল উপযুক্ত সময়। তবে সেপ্টেম্বর ও
অক্টোবর মাসেও এর চারা রোপণ করা যায়।
ফসল প্রাপ্তি সময়
শীতের
আগে রোপণ করা চারা সাধারণত চার থেকে পাঁচ মাসে ফুল ধরে। আর ছয় থেকে সাত মাসে কাঁচা
পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। সবজি হিসেবে কাঁচা ফল সংগ্রহ করা হয়। প্রথম দিকে গাছে
প্রচুর পেঁপে ধরে। এগুলোর মধ্য থেকে কিছু ফল ছাঁটাই করতে হবে। তাহলে অন্য
পেঁপেগুলো যখন পরিপক্ব হয়,
তখন সেগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায়। ১০ থেকে ১১ মাসে ঠিকঠাক পরিপক্ব ও পাকা ফল
সংগ্রহ করা যায়। পেঁপে আমাদের
দেশে সারা বছর পাওয়া যায়।